তাক্বদীর কি...?
শুরুতেই বলে রাখি আমি কোন ইসলামিক চিন্তাবিদ ( Islamic Scholar ) নাহ্ !
আমাদের একটা বদ অভ্যাস কিছু হতে না হতেই আমরা তাক্বদীরের উপর দোষ চাপিয়ে দেই !
তাই ভাবলাম এ ব্যাপারে একটা Status Post করলে ভাল হয়...
মনে করুন আপনি কোন পাওয়ার স্টেশন থেকে বিদ্যুত নিচ্ছেন এবং সেই বিদ্যুত আপনি ইচ্ছামত বিভিন্ন কাজে লাগাচ্ছেন।
এখন বিদ্যুতের জন্য আপনি পাওয়ার স্টেশন যিনি চালাচ্ছেন তার মুখাপেক্ষী। কিন্তু বিদ্যুত কী খাতে ব্যবহার করবেন সেটা আপনার ইচ্ছাধীন।
বিদ্যুতের সঠিক/অপ ব্যবহারের জন্য আপনি নিজেই দায়ী। ‘পাওয়ার স্টেশন যিনি চালাচ্ছেন’ তিনি নন।
কিন্তু যেহেতু ‘পাওয়ার স্টেশন যিনি চালাচ্ছেন’ তার ইচ্ছা ব্যতীত আপনি বিদ্যুত পেতে পারেন না, সেহেতু একথা বলা যায়, বিদ্যুতের যে ইচ্ছামত ব্যবহার আপনি করছেন তা ‘পাওয়ার স্টেশন যিনি চালাচ্ছেন’ তার ইচ্ছাতেই করতে পারছেন।
কথাগুলো মনযোগ দিয়ে পড়ুন ! !! !!!
কেউ যখন বলে “আল্লাহর ইচ্ছাতেই সবকিছু হয়”, তখন সবচেয়ে বড় যে ভুলটা সাধারণত হয় তা হলো আল্লাহর ইচ্ছাকে মানুষের ইচ্ছার মত কিছু একটা বিবেচনা করা হয়। বস্তুত আল্লাহর ইচ্ছা হচ্ছে আমাদের জন্য একপ্রকার শক্তি, যেই শক্তির বলে আমরা ইচ্ছা করতে পারি। আমরা তখনই কেবল ইচ্ছা করতে পারি যখন “আল্লাহর ইচ্ছা” আমাদেরকে ইচ্ছা করার জন্য প্রয়োজনীয় শক্তি সরবরাহ করে।
কথাগুলো মনযোগ দিয়ে পড়ুন ! !! !!!
এখন কেউ যদি দাবি করে যে সে ভবিষ্যতের কথা জানে এবং তার এই জানার ভিত্তিতে সে একটা বই রচনা করে, কিন্তু সেই ভবিষ্যদ্বাণীকে বাস্তবতা দেবার জন্য সে কোন প্রচেষ্টা না চালায়, তাহলে তার ব্যাপারে দুইটি সিদ্ধান্ত নেওয়া যায় - -- ---
১। যদি তার সব ভবিষ্যদ্বাণী বাস্তব হয়, তবে বলা যাবে সে আসলেই ভবিষ্যত জানে।
২। যদি তার ভবিষ্যদ্বাণী বাস্তব না হয়, তবে বলা যাবে সে আসলে ভবিষ্যত জানে না।
কিন্তু যদি তার প্রতিটা ভবিষ্যদ্বাণী ফলে যায় তার কারণে এটা বলা যাবে না যে তার ভবিষ্যদ্বাণীর কারণেই কোন ঘটনা ঘটেছে। বরং এটা বলতে হবে যে, ভবিষ্যতের সঠিক জ্ঞান থাকার কারণেই সে ঘটনাটিকে আগেই লিখে রাখতে পেরেছে।
এখন প্রশ্ন হল মানুষের কাজকর্ম কি তাক্বদির দ্বারা নিয়ন্ত্রিত নাকি লিপিবদ্ধ ?
হ্যাঁ, কিছু বিষয় আল্লাহ নির্দিষ্ট করে দিয়েছেন এবং তা তাক্বদিরের কিতাবে লিখেও রেখেছেন।
যেমন; কোন মানুষ কখন জন্মাবে, কখন মারা যাবে, সে কতটুকু রিযিক পাবে, ইত্যাদি। এসব বিষয় মানুষের সাধ্য/ক্ষমতা/ইচ্ছার অধীন নয়, বরং তাকদির দ্বারা লিপিবদ্ধ, নির্ধারিত এবং নিয়ন্ত্রিত। আর এসব বিষয়ে মানুষকে জবাবদিহি করতে হবে না।
কিছু বিষয়ে আল্লাহ মানুষকে ইচ্ছা প্রয়োগের ক্ষমতা/স্বাধীনতা দিয়েছেন। যেমন; ঈমান আনা বা না আনা, হালাল উপায়ে রিযিক অন্বেষণ করা বা হারাম উপায়ে করা, নেকি/বদির কাজ করা বা না করা। এই বিষয়গুলোর জন্য মানুষকে জবাবদিহি করতে হবে। এগুলোও তাকদিরের কিতাবে লিপিবদ্ধ করা আছে, কিন্তু এগুলো তাকদির দ্বারা নিয়ন্ত্রিত নয়।
অথচ আমরা অনেকে তাকদিরকে মনে করি, আল্লাহ তাকদিরের কিতাবে লিখে রেখেছেন বলেই আমরা পৃথিবীতে সব কাজ করি, বা আল্লাহ by force আমাদেরকে দিয়ে তাকদিরের কিতাবের লিখিত বিষয়বস্তুর অভিনয় করাচ্ছেন আর আমরা রোবটের মত অভিনয় করে যাচ্ছি।
"আর সেখানেই আমাদের ভুল...।"
কাজেই, যেসব বিষয়ে আমাদের পরীক্ষা করা হয়, তা তাকদির দ্বারা নির্দিষ্টকৃত/নিয়ন্ত্রিত নয়, বরং আল্লাহর এলেমের দ্বারা লিপিবদ্ধ মাত্র।
কাজেই রিযিক নির্ধারিত বলে ইসলাম মানুষকে হাত-পা গুটিয়ে বসে থাকতে বলে না, বরং হালালভাবে রিযিক অন্বেষণ করাকে ফরয বলে। কারণ: রিযিকের ‘পরিমাণ’ নির্ধারিত (কে কত রিযিক অন্বেষণ করল এটা মানুষের জন্য পরীক্ষা নয়।) কিন্তু রিযিক ‘অন্বেষণের পদ্ধতি’ নির্ধারিত নয়, বরং এক্ষেত্রে হালাল বা হারাম পন্থা বেছে নেবার ব্যাপারে মানুষের ইচ্ছার স্বাধীনতা রয়েছে। সে কোন্ পন্থা অবলম্বন করে এটাই তার পরীক্ষা। ইসলাম এ শিক্ষাই দেয় যে, যেহেতু রিযিক নির্ধারিত, কাজেই রিযিক প্রাপ্তির বিলম্ব যেন কাউকে হারামভাবে রিযিক অন্বেষণে নিয়োজিত না করে।
অতএব, তাকদিরের ব্যবহারিক শিক্ষা হচ্ছে:
১। কাজের আগে: কোন কিছু তাকদির দ্বারা নির্ধারিত ভেবে কর্মবিমুখ না হওয়া। যেটা উপকারি সেটার জন্য চেষ্টা করা, আল্লাহর সাহায্য চাওয়া।
২। কাজের সময়: কোন কিছুর জন্য চেষ্টা করার সময় হালাল উপায়ে চেষ্টা করতে হবে। এটা মনে রাখতে হবে যে, হালাল বা হারাম পন্থার কোনটা আমি বেছে নিচ্ছি সেটাই আমার পরীক্ষা। আল্লাহ কর্তৃক নির্দিষ্ট রিযিককে আমি কমাতে বা বাড়াতে পারবো না। যেটা আসার সেটাই আসবে, হয় হালালভাবে আসবে নয় তো হারামভাবে আসবে। আমার হালাল প্রচেষ্টার কারণে নেকি হবে, হারাম প্রচেষ্টার কারণে গুণাহ হবে। কাজেই অধিক পাবার আশায় হারাম পন্থা অবলম্বন করা হতে বিরত থাকতে হবে।
৩। কাজের পরে: কোন কিছুর জন্য সব ধরণের বৈধ চেষ্টার পরও যদি ব্যর্থতা আসে, তবে হতাশ হওয়া যাবে না, বরং বুঝতে হবে এটা আসলে আমার তাকদিরে ছিল না।
কাজেই, তাকদির কর্মবিমুখতা শেখায় না, বরং কার্যক্ষেত্রে সৎ থাকার এবং কাজের পরে হতাশাগ্রস্ত না হবার শিক্ষা দেয়।
যার ইচ্ছা, বিশ্বাস স্থাপন করুক এবং যার ইচ্ছা অমান্য করুক।
যে ইচ্ছা করে, সে তার পালনকর্তার পথ অবলম্বন করুক।
কেউ তামাশা করবেন নাহ্ !
প্রত্যেক ব্যক্তিই তার কৃতকর্মের জন্য দায়ী এবং কৃতকর্ম অনুযায়ী কর্মফল ভোগ করবেই...।
আল্লাহ আমাদের সঠিক বুঝার তাওফিক দান করুন...!
আমীন...🤲
Comments
Post a Comment