বারবার পাপ করে বারবার তওবা করার বিধান কি...?

আমার এই Note টা তাওবা নিয়ে ! !! !!!

প্রথমে দেখি তাওবা কি জিনিষ !

তওবা শব্দের অর্থ - ফিরে আসা।
পরিভাষায় তওবা হল : যে সকল কথা ও কাজ মানুষকে আল্লাহর নৈকট্য থেকে দূরে সরিয়ে দেয় তা থেকে ফিরে এসে ঐ সকল কথা ও কাজে লেগে যাওয়া, যা দিয়ে আল্লাহর নৈকট্য লাভ করা যায় ও তাঁর অসন্তুষ্টি থেকে বেঁচে থাকা যায়। এক কথায় পাপ-কর্ম থেকে ফিরে এসে সৎকাজে প্রবৃত্ত হওয়া ! !! !!!


আমরা আমাদের দৈনন্দিন জীবনে নানা রকম আকাম-কুকাম করে থাকি ! !! !!!

আমাদের জীবনটা স্রষ্টা এবং সৃষ্টি এ দুইটার মাঝে সম্পর্কিত ! !! !!!

আর এর উপর ভিত্তি করে আমাদের কৃত পাপকাজ গুলুকে দুই ভাগে ভাগ করতে পারি ! !! !!!

১। স্রাষ্টার সাথে সম্পর্কীয় পাপ
২। সৃষ্টির সাথে সম্পর্কীয় পাপ

খুলে বলছি !

১। স্রাষ্টার সাথে সম্পর্কীয় পাপঃ যে সকল পাপ শুধুমাত্র আল্লাহ রাব্বুল আলামীনের হক বা অধিকার সম্পর্কিত। যেমন শিরক করা, নামাজ আদায় না করা, মদ্যপান করা, সুদের লেনদেন করা ইত্যাদি।

২। সৃষ্টির সাথে সম্পর্কীয় পাপঃ যে সকল পাপ বা অপরাধ মানুষের অধিকার সম্পর্কিত। যে পাপ করলে কোন না কোন মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত হয়। যেমন, জুলুম-অত্যাচার, চুরি-ডাকাতি, ঘুষ খাওয়া, অন্যায়ভাবে সম্পদ আত্নসাৎ ইত্যাদি হাবিজাবি আকাম-কুকাম ।


প্রথম প্রকার পাপ থেকে আল্লাহর কাছে তাওবা ও ক্ষমা প্রার্থনা করার সাথে তিনটি শর্তের উপস্থিতি জরুরী। শর্ত তিনটি হল :
(১) পাপ কাজটি পরিহার করা।
(২) কৃত পাপটিতে লিপ্ত হওয়ার কারণে আন্তরিকভাবে অনুতপ্ত হওয়া।
(৩) ভবিষ্যতে আর এ পাপ করব না বলে দৃঢ় সংকল্প গ্রহণ করা।


দ্বিতীয় প্রকার পাপ থেকে তাওবা করার শর্ত হল মোট চারটি:
(১) পাপ কাজটি পরিহার করা।
(২) কৃত পাপটিতে লিপ্ত হওয়ার কারণে আন্তরিকভাবে অনুতপ্ত হওয়া।
(৩) ভবিষ্যতে আর এ পাপ করব না বলে দৃঢ় সংকল্প গ্রহণ করা।
(৪) পাপের কারণে যে মানুষটির অধিকার ক্ষুন্ন করা হয়েছে বা যে লোকটি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে, তার পাওনা পরিশোধ করা বা যথাযথ ক্ষতিপুরণ দিয়ে তার সাথে মিটমাট করে নেয়া অথবা তার কাছে ক্ষমা চেয়ে দাবী ছাড়িয়ে নেয়া।


এখন প্রশ্ন হচ্ছে পাপকাজ করে তাওবা করে আবার করা তারপর আবার তাওবা করা আবার আকাম কুকাম করলে এর বিধান কি...?

কেও একটি পাপ কাজ করার সাথে সাথে তওবা করলো, কিন্তু একই কাজ আবারো করলো, এভাবে কতবার পর্যন্ত তওবা আল্লাহের দরবারে কবুল হবে...?

আমি পড়েছি ৩ বারের বেশী তওবা কবুল হয়না...!
কিন্তু মৃত্যুর ডাক আসার আগ পর্যন্ত তওবা কবুল হবে।

তাই বলে এটা ভাববেন না যে, সামির ছিদ্দিকী বলছে মৃত্যুর আগ পর্যন্ত তাওবা কবুল হবে তাই এবার আমাগরে ঠেকায় কে...!?
চল যাই ............ করি আসি তারপর দুই গালে দুই থাপ্পর মারি তাওবা করি ফালামু !"

ভাই এই রকম জিলাপির প্যাচ আল্লাহ্‌'র দরবারে কাজে আসবে নাহ্‌ ! !! !!!


হ্যাঁ মানুষ মাত্রই ভুল !
আর আমরা অন্যায় কাজে লিপ্ত হই আত্মার প্রভাবে !

এখন প্রশ্ন তুলতে পারেন এটা আবার কি ?

হ্যাঁ আমাদের আত্মা ৪ প্রকারের হয়ে থাকে ;

১। প্রশান্তিময় আত্মা
২। তিরস্কারকারী আত্মা
৩। জিজ্ঞাসিত আত্মা
৪। অন্যায়ে উদ্বুদ্ধ কারী আত্মা

সব ধরণের পাপ থেকেই তওবা করা আবশ্যক। পশ্চিমাকাশে সূর্য উদিত হওয়া অথবা মুমূর্ষু অবস্থায় মৃত্যুর ডাক আসার পূর্ব পর্যন্ত তওবার দরজা উন্মুক্ত। তাওবাকারী যদি নিজ তাওবায় সত্যবাদী হয়, তবে তার পাপরাশীকে পুণ্য দ্বারা পরিবর্তন করা হবে- যদিও তা আকাশের মেঘমালার সংখ্যা বরাবর অধিক হয়।

তওবার ৩ টি শর্ত খালেস ভাবে পুরন করার পর আমরন চেষ্টা করে সেই তওবা রক্ষা করে চলতে হবে। তবুও যদি ভঙ্গ হয়ে যায় তবে আবার তওবা করবে।

গুনাহ হলো ঘৃণ্য আবর্জনা, সর্বাবস্থায় যা বর্জন করা আবশ্যক। গুনাহের এ আবর্জনা আমরা যদিও চোখে দেখি না, তার গন্ধ অনুভব করি না; কিন্তু মানুষের অন্তরে এর প্রভাব লক্ষণীয়।
রাসুল (সা.) বলেছেন, "মুমিন বান্দা যখন কোনো গুনাহ করে, তখন তার অন্তরে একটি কালো দাগ পড়ে। আর যদি সে তওবা করে নেয়, আল্লাহর কাছে ক্ষমা চায়, তবে তার অন্তর মসৃণ হয়ে যায়। আর যদি সে আরো পাপ করে তবে দাগ আরো বেড়ে যায়, এটাই হলো বান্দার অন্তর আচ্ছাদিত হয়ে যাওয়া; যার উল্লেখ আল্লাহ পাক কোরানে করেছেন।" -- সুনান ইবনে মাজাহ্‌

আর আমাদের মধ্যে অনেকেই  দুই গালে মানে থাপ্পড় দিয়ে আর মুখে ত্ববা ত্ববা বলাটাকেই তাওবা মনে করে।

সহিহ তওবার জন্য পাঁচটি গুণের কথা বলা হয়েছে ;

১. একনিষ্ঠতার সঙ্গে তওবা করা। তওবায় আল্লাহর প্রতি ভালোবাসা ও তার মহাত্ম্যেররে প্রতি সম্মান প্রদর্শন, তার কাছে কল্যাণের আশা করা এবং তার শাস্তি থেকে ভয় পাওয়া ইত্যাদির উপস্থিতি অত্যন্ত জরুরি।
 
২. কৃত গুনাহের জন্য লজ্জিত হওয়া ও হীনতা প্রকাশ করা এবং এ মনোভাব প্রকাশ করা যে, এ তওবা কবুল না হলে পুরো জীবনটাই বৃথা যাবে।
 
৩. অতি দ্রুত গুনাহের কাজ ত্যাগ করা।
 
৪. কৃত অপরাধে পুনরায় ফিরে না যাওয়ার সুদৃঢ় সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা।
 
৫. তওবা কবুলের সময় শেষ হওয়ার আগেই তওবা করা।


হজরত আলী (রা.) থেকে বর্ণিত, নবিজি (সা.) বলেছেন, কোনো ব্যক্তি যদি গুনাহ করার পর উত্তমরূপে অজু করে, অতঃপর দু’রাকাত নামাজ পড়ে এবং আল্লাহর কাছে ক্ষমা চায়, তবে আল্লাহ তাকে অবশ্যই মাফ করে দেবেন। 


অতএব পরিশেষে একটা কথাই বলব, যেটা সব STATUS এর শেষে বলি

যার ইচ্ছা, বিশ্বাস স্থাপন করুক এবং যার ইচ্ছা অমান্য করুক।
যে ইচ্ছা করে, সে তার পালনকর্তার পথ অবলম্বন করুক।

কেউ তামাশা করবেন নাহ্‌ !
করলে কি আর বলার " যে লাউ সে কদু "

Comments